Posts

Showing posts from March, 2023

প্রজাপতির নির্বন্ধ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
 এক আরব কলোনিয়াল যুগ (মুসলিম) হইতে অন্য আরেক ইউরোপীয় কলোনিয়াল যুগের ( খ্রিষ্টান) সন্ধিক্ষণে ভারতীয় আর্য কলোনির (সনাতন ধর্মসমূহ) বৈষয়িক পরিবর্তনের নিমিত্তে জাতি ধর্ম ও সংস্কৃতির যে আত্মশ্লাগা, তার এক প্রহসনমূলক মহড়া যেন প্রজাপ্রতির নির্বন্ধ। বিষ্ণুর রমনী অবতারে সাথে শৈলর পুরুষ অবতারে চির চিরকুমার সভার যে সাদৃশ‍্যানুমান অঙ্কিত হয়েছে। তাতে  লৈঙ্গিক পরিচয় ও তার সঙ্কট নিয়ে ভারতীয় পূরাণ ও সাহিত‍্যে যে বিশ্বে অনন‍্য স্থান অধিকৃত করিয়া আছে তাহাই স্মরণ করিয়া দেয়। নারীর উচ্চ শিক্ষার সাথে যর্থাথ বিবাহের যে একটা প্রচ্ছন্ন বিরোধ ও সংকট রহিয়াছে তাহাকেই পরিস্ফুটন করিয়া তোলে। মধুসূদন অক্ষরবৃত্তছন্দর  (মিত্রাক্ষর ছন্দ)  বিপরীতে যেমন অমিত্রাক্ষর ছন্দের সূচনা করিয়াছিলেন। কালজয়ী মেঘনাদবদ কাব‍্য সৃজন করিয়াছিলেন। প্রজাপ্রতির নির্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ পরিহাস রসে সেই ছন্দ ও কাব‍্যর অনুকরণে  আর্তনাদবদ কাব‍্য স্তবক প‍্যারোডি করিয়াছেন। এখনকার কালে কোন কবি, তাহার সমসাময়িক কোন কবিকে নিয়া এমন ব‍্যঙ্গ করিলে। সৃজনশীলতার দুর্ভিক্ষের উস্কানি দাতা হিসাবে আখ‍্যায়ায়িত হইতেন। বিলক্ষণ ভাগ‍্য সহায় থাকিলে মতের স্বাধীনতা বা কাব‍্য

দুই বোন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
 রবীন্দ্রনাথের শেষপর্যায়ের উপন‍্যাস গুলো বড়গল্প থেকে একটু বড় আর ক্ষুদ্র উপন‍্যাসিকা থেকে একটু ছোট হয়ে এসেছিল। রচনারীতি আর বর্ণনাভঙ্গী হয়ে উঠেছে অধিক প্রাবন্ধীয়। চরিত্রবিন‍্যাস বহুমাত্রা থেকে নেমে এসেছে সরলরৈখিক পথে। সমকালীন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে আখ‍্যানবস্তুর প্রধান আশ্রয়। আখ‍্যানপর্ব গুলো যেন আরো স্পষ্ট করা হয়েছে। দুইবোনের নরনারীর প্রকৃতি ও প্রবৃত্তিতে যে অসংখ্য ভেদ বিভেদ তারই রূপরেখা হয়ে উঠেছে। এখানে মানব মানবীর বাহ‍্যিক ঘাত-প্রতিঘাতে ছাড়িয়ে ব‍্যাক্তির অভ‍্যন্তরীণ লক্ষণ-উপলক্ষণের আভাস প্রদান করা হয়েছে। পূর্ববর্তী উপন‍্যাস গুলোতে চতুর্মাত্রিক চরিত্ররীতি থেকে  শশাঙ্ক-ঊর্মিমালা-শর্মিষ্ঠা-নীরদের বর্ষাঋতু ও বসন্তঋতুর বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়েছে।  আমি তো মনে করি, নীরদ-শর্মিষ্ঠা হলো জার্মান ফিলোসফার কান্টের কর্তব্যের খাতিরে কর্তব‍্য'র ভাববাদী কঠোর অনুশাসন পালনে ব্রত। অন‍্যদিকে ঊর্মিমালা ও শশাঙ্ক  হলো ইংরেজ দার্শনিক বেন্থাম ও মিলের ম‍্যাক্সিমাম হ‍্যাপিন‍্যাস ফর ম‍্যাক্সিমাম নাম্বার এর প্রায়োগিক উদারনীতির অনুসেবায় আবদ্ধ।  কিন্তু একটি প্রণয়োপাখ‍্যান হিসাবে দুই বোনের শর্মিষ্ঠা-শশাঙ্ক-ঊর্মিমালা-

চার অধ‍্যায় : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
 চার অধ‍্যায়ে প্রেম ও বিপ্লব যেন ঊষাকালের তরল আধার ক্রমে অস্ফুট আলোয় অবগাহনে নামে, ঠিক তেমন বোধ হইলো। শেষের কবিতার অমিত লাবণ‍্যের চার অধ‍্যায়ের অতিন এলার প্রেম দহন আর ত‍্যাগ বোধহয় অধিক দ‍্যোতনাময়। রবীন্দ্রসাহিত‍্য পড়তে পড়তে একটা ভাবনার উদয় হলো। এই যে রবীন্দ্রনাথের  চরিত্রদের মনের এতো সংবেদনশীল প্রকাশ। আবেগের এতো আলংকারিক ব‍্যাঞ্জনা। তা কি সত‍্যি ঐ সময়ের মাটির মানুষের প্রতিচ্ছবি? না কি লেখকের কল্পনার সাহিত্যিক অধিকার? দুটোর যেটাই হউক না কেন। আজ এই বেলায় আমি যদি সেই বেলার বাস্তব বা অবাস্তব, যে চিত্রই অঙ্কন করতে যাই কেন, আমাকেও কি সেই সময়ের আবেগকে ধরতে হবে? যদি ধরতেই হয় তাহলে, যে কোন সময়ের সবকিছুকে চিত্রিত করার জন‍্য নানা উপাদান বিদ‍্যমান। কিন্তু আবেগকে আনতে গেলে লিখিত উপরণের চেয়ে অধিক শ্রেয় কোন মাধ‍্যম কি জগতে আছে?  সাহিত‍্য ও শিল্পের মূল‍্য তো এই খানেই। যে সাহিত‍্য হচ্ছে মানবঅনুভূতির কালোতীর্ণ আধার। "আমি আজ স্বীকার করব তোমার কাছে,–তোমরা যাকে পেট্রিয়ট বলো আমি সেই পেট্রিয়ট নই। পেট্রিয়টিজ্‌মের চেয়ে যা বড়ো তাকে যারা সর্বোচ্চে না মানে তাদের পেট্রিয়টিজ্‌ম কুমিরের পিঠে চড়ে পার হবার খেয়ানৌ

মালঞ্চ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
  🌼এই কথাটি মনে রেখো, তোমাদের এই হাসিখেলায় আমি যে গান গেয়েছিলেম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়। শুকনো ঘাসে শূন্য বলে আপন-মনে অনাদরে অবহেলায় আমি যে গান গেয়েছিলেম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায় দিনের পথিক মনে রেখো, আমি চলেছিলেম রাতে সন্ধ্যাপ্রদীপ নিয়ে হাতে। যখন আমার ও-পার থেকে গেল ডেকে ভেসেছিলেম ভাঙা ভেলায়। আমি যে গান গেয়েছিলেম জীর্ণ পাতা ঝরার বেলায়॥"🌼 মালঞ্চ পড়ছিলাম। আর নীরজার বাঁচার আকুতিতে, আদিত্যকে আমরণ নিজের অধিকারে রাখার অভিলাষের সুরে, এই রবীন্দ্র স্বরলিপিটা যেন সারাটা সময় গুঞ্জরিত হচ্ছিল। সরলার অতৃপ্ত প্রণয়ের সাথে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অমিত্রাক্ষর ছন্দে, গল্পের সম্ভবনার দুয়ার যেন অবারিত করে তুলেছিল। এমন নীতিদীর্ঘ উপন‍্যাস,  কিন্তু ভাবে ও ব‍‍্যাঞ্জনায় এক অতিদীর্ঘ নাগকেশরের রাঙা রঙ, আর গভীরতর সুললিত পিঁউকাহঁর সুর যেন বেজে চলেছে অর্হনিশ। 📘মালঞ্চ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩৪।

শেষের কবিতা : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
অমিত চরিতে লেখকে স্বকীয় রচনাভঙ্গির সাথে সাধারণ সাহিত‍্যরীতিকে মুখ ও মুখোশের সাথে যে তুলনা করেছেন তা বোধ হয় সেই সময়ের জন‍্য চিন্তার খোরাক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ঠিক তারপরই অযাচিত ভাবে খ‍্যাতিমান লেখককে অবজ্ঞা করা। অখ‍্যাত লেখকে গৌরবান্বিত করে তোলা। কিংবা কোন লেখকের লেখা না পড়ে ত্রুটিপূর্ণ, দোষযুক্ত অনুমাননির্ভর নেতিবাচক মন্তব‍্য করা। আবার সুহৃদ লেখকের সৃষ্টিকর্মকে অনন‍্য বলে অভিহিত করা শতবছর পূর্বেও ছিল। ভেবে অবাক হই। আজ এই সময়ে ঢাকার সাহিত‍্যলোকও সোশ্যাল মিডিয়া মুখহীন হয়ে, অমিতের মুখোশ পড়ে প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াচ্ছে। ভেবে অবাক হই! বিয়ে ও পাত্রী নির্বাচন সম্বন্ধে অমিত মানুষ হয়ে জন্মানো ও ব‍্যাক্তি হয়ে গড়ে উঠার যে সীমারেখা টেনে দেন, তা এক কথায় চিন্তাকর্ষক। লেখক যখন নিজকেই  চরিত্র হিসাবে আখ‍্যানকান্ডে আর্বিভূত হন, তবে সেটা আত্মজৈবনিক অনুষঙ্গ হিসাবে নয় বরং গল্পের স্টাইল হিসাবে। তখন পাঠক হিসাবে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। অমিতের কবি ও কবিতার বক্তৃতায় রবীন্দ্রনাথকে সরাসরি আলোচ‍্যবস্তু হিসাবে নিয়ে আসেন। এটি বোধহয় বাংলাদেশে প্রথম। রবীন্দ্রনাথ তার উপন‍্যাসগুলোতে স্থান হিসাবে যেভাবে বর্তমান বাংলাদেশের

যোগোযোগ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
"পিতেব পুত্রস্য সখেব সখ্যুঃ প্রিয়ঃ প্রিয়ায়ার্হসি দেব সোঢ়ুম্‌।" সংস্কৃত এই চরণদুটি যে সহনশীলতা ও সমবেদনার কতো বিশাল প্রেরণা, তা আমি হাড়ে হাড়ে বুঝি। এই ভাবখানি মনরাজ‍্য দখল করতে পারলে, সংসারের যত জঞ্জাল ও কোন্দলকে কতো সহজে আগ্রাহ‍্য করে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা আমি নিয়তই স্বীকার করি। উপন‍্যাসের প্রথম ভাগ পাঠ করে, মনে হলো পূর্বের উপন‍্যাস গুলো পড়ে যতোটা বেঠিক লাগলো তা থেকে উত্তরণ হয়েছে। পড়তে আরাম ও প্রফুল্লবোধ হচ্ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ভাগে এসে যেন  রবিবাবুর স্বভাবগতভাবে  চরিত্রের গল্পকে ছাপিয়ে চরিত্রের চিন্তা ও জগত-জীবন ব‍্যাখা-বর্ণনার সাধারণ বিবরণপথ সৃজনে ব‍্যপ্ত হলেন।  যবনিকায় এসে মনে হলো, রবিবাবুকে দোষী সাবস্ত না করাই শেয়। গল্প বলার এ রীতি ও ভঙ্গিখানি একান্তই তার স্বসৃষ্ট। কি লিখতে পারতেন বা কি লিখলেন না তার বিচার না করাই শ্রেয়। এই মানদণ্ডে রায় দিতে গেলে ইনফিনিট রিগ্রেসে পতিত হওয়ার সম্ভবনা আছে।  লেখক কেন আরো সৃজনশীল হলেন না। গল্প কেন আরো সম্ভবনাময় হলো না। এই প্রত‍্যাশা অযোক্তিক, ক্ষেত্রবিশেষ বাতুলতা মাত্র মনে করি। নারী মর্যাদার মূল‍্য যেমন চিত্রিত হয়েছে। তেমনি পরাধীনতা নারীর শ

ঘরে বাইরে : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
শুরুতেই "মা গো, আজ মনে পড়ছে" এই বাক‍্যাংশটি যখন পড়লাম। তখন পড়িয়াছে এর পরিবর্তে পড়ছে ক্রিয়াপদ দেখে মনে হলো ভাষায় একটা প‍্যারাডাইম শিফট ঘটে গেলো। কিন্তু দ্বিতীয় বাক‍্যের শেষ অংশে "অরুণরাগরেখার" শব্দবন্ধনী পড়ে মনে হলো বঙ্কিমীয় সংযুক্তশব্দমালার আবহ থেকে মুক্ত হতে পারে নাই। তাই এই পরিবর্তনটাকে পুরোপুরি প‍্যারাডাইম শিফট বলা উচিৎ নয়। যদিও শব্দের এমন সুংযুক্তি আমার অত‍্যন্ত প্রিয়। কয়েক পৃষ্ঠা অন্তরে লক্ষ করলুম রবিবাবু তার চিরাচরিত নাট‍্যভঙ্গিমায় সংলাপরীতি কে বিদেশীপন‍্যের মতো আমূলে বর্জন করেছেন। তখন থেকে বোধকরি ভাষার সাধু ও চলিতের মধ‍্যে ভারতীয় সাম্প্রদায়িক প্রকৃতির মতো করে  কে বেশি শুদ্ধ এই বিষয়ে একটা রেষারেষি শুরু হয়ে গেলো। এই যেমন এখনকার কালে ভাষার সমঝদারী সুবেদারগণ বাংলাদেশী বাংলা না ভারতীয় বাংলার আধিপত্য নিয়ে মাঝে মাঝেএকটা মানসিক দ্বন্দে কলহে লিপ্ত হয়ে যায়। আমি তো বলি ভাষার বিচারে শুদ্ধতার কলকাঠি নাড়িয়ে মনকে কুলষিত করা একপ্রকার বাতুলতা।  নারী ও পুরুষের প্রভেদের যে বাহাস বিমলা ও নিখিলেশ শুরু করেছে। তা বাঙলা রেনেসাঁ সৃষ্ট ভাব ও ত্বত্তবিধানের পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই না।

চতুরঙ্গ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
চতুরঙ্গ পাঠ শুরু করিবার পূর্ব মুহূর্তে ভাবিতেছিলা যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪) শুরু হওয়ার দুই বৎসর পরে ইহার প্রকাশকাল (১৯১৬)। ইতিমধ্যে ভারতীয় সৈনিকগণ সমরপ্রান্তরগুলোতে দলে দলে ছড়িয়া পড়িয়াছে। তাই ঐ বিষয়ে উপন‍্যাসখানি কোন উল্লেখ্য পাইবো, ঐ ছিল প্রত‍্যাশিত। যেহেতু মেসোপটেমিয়া যুদ্ধমঞ্চে ভারতী তথা বাঙালি পল্টনের সম্পৃক্ততার উপর এখনখানি উপন‍্যাস লিখিবো বলিয়া, অনেকদিন যাবদ গবেষণা করিয়া আসিতেছি। যুদ্ধের সরাসরি উল্লেখ না থাকিলে যুদ্ধজাহাছ ও যুদ্ধ কাপ্তানের সম্বন্ধে একটা তুলনার উল্লেখ্য পাঠ করিয়া দুধের স্বাদ ঘোলে মিটায়া লইলাম। হিন্দর্ধমের বিপরীতে ব্রাক্ষ্ম‍ আচারের নাস্তিকতা বরাবরের মতোই উপস্থিত। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক একটা অ‍্যরিস্টটলীয় অবরোহ যুক্তিবাক‍্য সমসাময়িক নীট‍ৎশের "ঈশ্বর মৃত" এই ভাবটাকেই যেন সজীব করিয়া তুলিল। বাঙলায় এমন স্পষ্ট বচন এক দুঃসাহসিক ব‍্যাপার বটে। এখনকার কালে এই বাক‍্য রচনা ভাবনাতীত বিষয়। কাহিনি বিন‍্যাস কতকটা সৃজনশীল হইলো। কতকটা মননশীলতায় পূর্ণ তাহার হইতে এই নীতিদীর্ঘ উপন‍্যাসটির গঠনিক দিকটা প্রশংসনীয়। কাহিনির পরতে পরতে শেক্সপিয়র, মিল্টন, স্কট, মিল, বেন্থাম, স্পে

নৌকাডুবি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
পৃথিবীর দুইটা পীঠ একই সঙ্গে কেউ দেখিতে পারে না।  মানুষের এই অজ্ঞেয়তা আর সীমাবদ্ধতা আমাকে রমেশের দ্বিতল জীবনের স্বরূপটা যেন  এক নিমিষে চোখের সামনে প্রস্ফুটিত করিয়া তুলিল। সত‍্যি তো! মানুষের জীবনস্তর গুলো সমসময়ে অবলোকন করো সম্ভবপর হয়? ক্ষত্রিয় বিবাহ প্রথার একটু ছৌট্ট উপকাহিনী যেন নৌকাডুবির সম্পূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক জিজ্ঞাসা নিয়া হাজির হইল। অনির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে নিশ্চিত যাত্রার এক গভীর দার্শননিক কথোপকথন পাঠ করিলাম ২৮নং পরিচ্ছেদে। জীবনকে স্রোতের মতো করিয়া বহিয়া নিতে হয়। স্রোত ধীর শ্লথ করিয়া দিলে, জীবনের ভার জমিয়া দীর্ঘ, উচু আর শক্ত হইয়া যায়। মুক্তভাবে বাচিঁবার প্রেরণা নিঃশেষ হইতে থাকে। ঠিক এই মর্মকথাই যেন নৌককাডুবির বাক‍্যাবলীর শৃন‍্যস্থানে খেলা খেলিতেছিল। ৪৩ পরিচ্ছদে প্রচলিত জীবন আচরণের গন্ডি পেরিয়ে ভিন্ন রীতি অবলম্বন করিলে, সমাজে কি যে একটা গোলযোগ বাড়িয়া যায় তাহারই এক সুস্পষ্ট দৃশ্যায়ন চিত্রিত হইয়াছে। বিশেষত ব্রাক্ষ্মসমাজের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখা দেখিতে পাইলিম। পুরুষের ন‍্যায় নারীকে যদি মুক্ত ও স্বচেতনায় বাড়িয়া উঠিতে দেয়া হয়। তাহইলে নারীও যে আত্মবিশ্বাসী ও স্বাধীন স্বত্তায়

চোখের বালি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
সেই কবেকার কথা। মাধ‍্যমিকে অধ‍্যয়নরত অবস্থায় চোখের বালি পড়িয়াছিলাম। কিশোরমনের আধখানি বুঝা আর আধখানি অবুঝার মধ‍্যবর্তীতে কী এক মুগ্ধতার আবেশ ছড়ায়িইয়া পড়িয়াছিল।  তারপর উচ্চমাধ‍্যমিকে বিশ্বসাহিত‍্য কেন্দ্র মিলনায়তনে ঋতুপর্ণ ঘোষের চলচ্চিত্রায়ন  দেখিয়াছিলাম। পূর্ণাঙ্গ তারুণ‍্যের আবহে আরো গভীর মুগ্ধতায় ডুবিয়াছিলাম অর্হনিশ। আজি এতো এতো বছর পশ্চদে আসিয়া। এই ত্রিশোর্ধ বয়সে, পুনরায় যখনি চোখের বালি পাঠে অভিনিবেশ করিলাম। আশ্চর্য! পূর্বেকার মুগ্ধতার মালাখানি যেন বা মলয়হাওয়ার তোড়ে আলগা হইয়া গেল।  চরিত্রদের অতি সংবেদনশীল মন ও তরল আবেগের ঘন ঘন বহিঃপ্রকাশে আমার চিত্ত যেন ক্লান্তিতে ভরিয়া উঠিল। বিনোদিনীর বিবাহ ও বৈধ‍্যবের দৃশ‍্যপট যেন দীর্ঘ লম্ফে পাঠকের কল্পলোকে অতিক্রমণ করিয়া গেলো।  মাঝে মাঝে কাহিনীর কক্ষান্তর এতো আকস্মিকতার সহিত হইতে লাগিল; বিশেষ করিয়া বিবাহের পাত্র-পাত্রীর বিপ্রতীপকোণে পরিবর্তণ একদিকে যেমন রোমাঞ্চকর ঠেকিল, অন‍্যদিকে তেমন কৌতুকময় বোধ হইলো।  সংলাপের ক্রমান্তর অধিক ঘনত্বে সংক্রমিত ঠেকিয়াছে।  তবে রবীন্দগদ‍্যের প্রবাহমানতায় বরাবরের মতোই মনোরম লাগিল।  📘চোখের বালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  ১৯০৩।

রাজর্ষি : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
  ইউরোপীয় রেনঁসা যেরূপ রাষ্টকে চার্চ হইতে আলাদা করিয়াছিল। রাজর্ষিতে সেইরূপ রাজ‍্যকে ধর্মালয় হইতে মুক্ত করিয়া স্বতন্ত্র স্বত্বা দান করিবার প্রচেষ্টা করা হইয়াছে। এই সম্বন্ধে রবীন্দ‍্র অত‍্যন্ত চমৎকার এক রূপকদৃশ‍্যর অবতারণা করিয়াছেন। যেন রাজা গোবিন্দমানিক‍্য তাহার ভ্রাতা নক্ষত্ররায়কে  আলোকময় প্রাসাদ হতে অন্ধ অরণ‍্যে নিয়া গিয়াছিলেন। তেমনি পুরোহিত রঘুপতির শিষ‍্য  জয়সিংহকে আরন‍্যক মন্দির হইতে প্রাসাদে নিয়া গিয়ািছলেন। সৌদামিননী যেমন আলো আর আধাঁরের সীমারেখাকে বিচ্ছিন্ন করিয়া তোলে। বৌদ্ধাচার বা আরকানরাজ‍্যের শাসনকে কেন মগের মুলুক (বৌদ্ধ‍্যরাজ‍্য) বলিয়া থাকে তা জানিলাম। সেকালে জীববলি সম্বন্ধে হিন্দুজাতি বৌদ্ধ ও মুসলমানদের আচারকে কেমন করিয়া কটাক্ষ করিতো তাহা বিস্ময়কর। ধর্মনিরপেক্ষতা ও প্রাণীহত‍্যা নিয়া এমন স্পষ্ট ও দ্ব‍্যর্থ উপাখ‍্যান কি বাঙলায় রবিবাবুই প্রথম উপস্থাপন করিয়াছিলেন? তাও আবার অমন তরুণ বয়সে। কী দুঃসাহস! সুবাহবাঙলার চট্রগ্রাম ঢাকা কুমিল্লা ত্রিপুরা (বঙ্গ), পাটনা (বিহার), রাজমহল (ঝাড়খন্ড), বিজয়গড় (মধ‍্যপ্রদেশ), হইতে দিল্লী সালতানাথের অন্তিম পর্বের রাজকোন্দল নিয়ে এমন বৃহৎ ব‍্যাপ্তির

বৌ-ঠাকুরাণীর হাট : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

Image
শুরুতেই একটু স্মৃতিচারণ করিবো। ইহা যে অতিবড় কাকতালীয় ঘটনা তাহা বারবার মনে উদয় হইতে লাগিল। রবিবাবুর বৌ-ঠাকুরাণীর হাট গন্থখানি, সেই শৈশবে স্কুলের টিফিনের টাকা বাচিঁয়ে কিনিয়াছিলাম। কিন্তু কি কারনে যেন পড়া হইয়া উঠে নাই। ক্রমে সন্ধ্যার আধারের মতো নিশ্চুপে চলিয়া গেলো দীর্ঘ বাইশটি বছর। এই বেলায় এসে আবার পড়িতে আরম্ভ করিলাম। সন্ধান লইয়া দেখিলাম, উপন্যাসখানি যখন প্রকাশিত হয়, তখন রবীন্দ্রনাথের বয়সও বাইশে পর্দাপন করিঢাছিলো। আরো দুইখানি দৈব অদৈব ঘটনা কেমন করিয়া যেন বৌ-ঠাকুরাণীর সাথে খানিক মিলিয়া গেল। গতকাল সকালে বৌ-ঠাকুরাণী প্রথামাংশ শেষ করিয়া, অফিসে যাইবার সময়  জানিতে পারিলাম, গাজীপুর শালনায় আমাদের জমির পূর্ব পাশের দেয়াল, পূর্বরাত্রির ঝড়ে ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে। তেমনি অফিস হইতে বাড়ি ফিরিয়া, রাতের আহার পর্ব শেষ করিয়া, বৌ-ঠাকুরাণীর অবশিষ্ঠ  অংশখানি পড়িয়া সমাপ্ত করিব বলিয়া মনস্থির করিয়াছি। এমন সময় জানিতে পাইলাম আমার বাড়ির সামনে প্রতাপাদিত‍্যের মতো রাজপ্রাসাদন‍্যায় বাড়িতে আগুন লাগিয়াছে। সমগ্রএলাকার সবার সম্মিলিত  প্রচেষ্টায় অনেক কষ্টের পর গৃহদাহ নির্বাপণ করিতে সচেষ্ট হইয়াছি। অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, ধোয়াঁ আর ভষ্মের

মায়া-কানন : মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Image
 মধুপাঠকালে খুব আফসোছ হচ্চিল এমতি মনমোহিনী সাহিত‍্যরসে যদ‍্যি উপন‍্যাস পড়া যেতো। মায়া-কাননের দীর্ঘসংলাপ আর গদ‍্যন‍্যায় বর্ণনাভঙ্গি যেন‍্যে কিছুটা আহ্লাদ পূরণ করচ‍্যে।  স্থান আর পাত্র পাত্রীর নামসমূহ সত‍্যযুগের চরিত্রে সাথে মিল থাকায় সামান‍্য মনযোগে ব‍্যাঘাত কচ্চ‍্যে। কালিদাস কাব‍্যশ্লোকের পরোক্ষোল্লেখ চমৎকৃত কচ্চ‍্যে আবার মেঘদূতম পরবর্তীকালে সুরালোক ও নরালোকের বাস্তবচিত্র কিছুটা বিভ্রমে পতিত কচ‍্যে। 📘মায়া-কানন মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৪

বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ : মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Image
 ভক্তপ্রসাদ: মর বেটা, কোম্পানির সরকার তো আমাকে ছাড়বে না। তা এখন বল খাজনা দিবি কি না।  প্রথমাঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক -এমন প্রহসনে কোম্পানির শোষণের মতো গুরুগম্ভীর বিষয়ের যথাযথ ব‍্যবহারে আমি মুগ্ধ হচ‍্যি। গদাধর: মশায়, মুসলমান হলো তো বয়ে গেলো কি? আপনি না আমাকে কতবার বলেছেন যে শ্রীকৃষ্ণ ব্রজে গোয়ালদের মেয়েদের নিয়ে কেলি কত‍্যেন।  -প্রথমাঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক ভারতীয় বর্ণবাদ যা স্বজাতিতে বিরাজমান ছিল‍্যে, ঠিক তাই এক সময় যবন বা ম্লেচ্ছদের উপর আরোপ কচ‍্যিল। পশ্চিমা বণাবাদ একরৈখিক কিন্তু ভারতীয় বর্ণবাদ বহুমুখী। তদপি পাকেস্তান আমলে বাঙ্গালি ও পাঞ্জাবী-পাঠানের বর্ণবাদে তো নবজাতীয়তাবাদ ও স্বাধীন ভূখন্ড প্রতিষ্ঠায় জন‍্য বিলক্ষণ অনুঘটক হিসাবে কার্য কচ্চে। ফতেমা: না ভাই মুই তোর কড়ি পাতি চাইনে, মোর আদমি এ কথা মালুম কত‍্যি পাল‍্যি মোরে আস্তো রাখপে না। -দ্বিতীয়াঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক যতই মধুচরণ পাঠ কচ‍্যি ততই দেশজ কথ‍্যরূপের ব‍্যবহার যে বাঙ্গলাসাহিত‍্যে কোন নবসংযোজন নয় তা স্পষ্ট হচ‍্যে। ইলিয়াস, জহির, কমলকুমার, বা বঙ্কিমে এর প্রতুল প্রয়োগ হচ‍্যিল। 📙বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ  মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৬০

পদ্মাবতী : মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Image
  মরজা : জগদ্বীশর আমাদের অমর করেও   দুঃখের অধীন কল‍্যেন। প্রথমাঙ্ক , প্রথম গর্ভাঙ্ক।   - পদ্মাসংলাপ , পদ্মগীত ও পদ্মকাব‍্য পাঠে পুঃপুনঃ একটি কথাই মনমর্মরে ধ্বনিত হচ‍্যে। জগত এতো দুঃখ ও ক্লেশময় তারপর আমরা দুঃখজাগনিয়া বস্তু হতে বিরত থাকি না। তাহলে যে জগত জীবন সংসার নিথর রব্যে। মানবজজীবন বিফল হব্যে।   কষ্ণুকী: বিধির এ বিধি কিন্তু কে পারে লঙি্ঘতে ?- ছায়ায় কি ফল কবে দরশে তরুর ? - দ্বিতীয়াঙ্ক , প্রথম গর্ভাঙ্ক   পদ্মাবতীর অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত গীত ও কাব‍্যসমূহ বোধহয় বাঙ্গলায় প্রথম।   পদ্মাবতী নাট‍্যখানি পাঠে দুইটি ভাবনা উদয় হচ‍্যে। পৃর্বেপঠিত ঐতিহাসিক কৃষ্ণকমারীকে যদ‍্যি পৌরাণিক অলংকারে সজ্জিত করি। তেমতি পদ্মাবতীকে যদ‍্যি ঐতিহাসিক ও মূর্তমান প্রলেপ লেপ‍্যেন করি। তাহলে উভয় ক্ষেত্রে আমি বর্তমান , বোধকরি মনষ‍্যের আবহমান প্রকৃতিকেই শুধো অবলোকন কত‍্যে পাই।   রমণীদের   রূপশ্রেষ্ঠা , ক্ষমতা ও মনোতূষ্টিস্বরূপ নারীকে উপটৌকনতূল‍্য বিনিময় ও ব‍্যবহার , নারদের বিবাদ ও বিগ্রহ সমাচার

একেই কি বলে সভ্যতা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Image
 নবোকুমার:  "কিন্তু জেন্টেলম‍্যেন, এখন এ দেশ আমাদের পক্ষে যেন এক মস্ত জেলখানা; এই গৃহ কেবল আমাদের লির্বাটি হল অর্থাৎ আমাদের স্বাধীনতার দালান।" কিংবা  নবোকুমার : কিয়াবাৎ, জীতা রও। বেঁচে থাক, ভাই।   - প্রথমাঙ্ক, দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক। তদসময়ে বাঙ্গলিশ (বাংলা ও ইংলিশ) বা বাঙ্গন্দি ( বাংলা ও হিন্দ) মিশ্রণে কোন সাহিত‍্য রচনা করত্তে পারে তা আমার কল্পনাতীত ছিল‍্যে। লিখিত ভাষায় এমন পরীক্ষণ মধুসূদনই কি প্রথম করচ‍্যিল। সার: ইউ ব্লডি নিগর! সার: ইউ ব্ল‍্যাক ব্রুট! উক্ত উক্তিদ্বয় আজিকাল আমরা আমেরিক‍্যন রেসিজম থিমড লিটরেচরে হরহামেশাই দেখত্তে পাচ্চি। সহজে বল্লে পারি, এটা এখন পপুলার ট্রেন্ড চলচ‍্যে। কিন্তু বাঙ্গলায় শতবৎচ্চর পূর্বেই লেখ‍্যে হয়েচে। রেসিজম নিয়ে বাঙ্গলায় এতোটা আভরণহীনভাবে  মধুসূদনই বোধ করচ্চি প্রথম লিখেচে। পশ্চিমা সংস্কৃতির ছত্রতলে যুবকদের অধঃপতন নয় বরং উপনিবেশ উৎপন্ন এক মিশ্র ও নব‍্যসংস্কৃতির অস্তস্তি ও সংশয় যেনো এর আকর্ষন। 📙একেই কি বলে সভ্যতা’ মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৬১

কৃষ্ণকুমারী : মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Image
।মনের সুখই বড় সুখ।।            ~কষ্ণা, পঞ্চমাঙ্ক, তৃতীয় গর্ভাঙ্ক মধুশতাব্দীতে বঙ্গভূমিসমাজ রেখে সুদূর রাজস্থান ও মহারাষ্টের আন্তঃরাজ‍্যের রাজদখল ও বিবাহবিগ্রহ নিয়ে নাট‍্যগ্রন্থ রচনা কচ‍্যে বলে কতটা নিগ্রহ সহ‍্য করচ‍্যে তা বলতে পারবো না। কিন্তু আজ সামাজিকমাধ‍্যমের কালে মধুদা  ঢাকাই সাহিত‍্যলোক কর্তৃক কূটতর্কে বিলক্ষণ অপর্যস্ত হচ‍্যেন অনুমান করতে পারি। ।।যেমন কোন লবণাম্বুতরঙ্গ কোন সুমিষ্টবারি নদীতে প্রবেশ কর‍্যে তার সুস্বাদ নষ্ট করে, এ দুষ্ট যবনদলও সেইরূপ এদেশের সর্বনাশ করেছে।।। ~ভীমসিংহ, দ্বিতীয়াঙ্ক, প্রথম গর্ভাঙ্ক নাট‍্যপটভূমিটি যবনশাসনের অন্তিমকালকই নির্দেশ করচ‍্যে। কিন্তু তখন হিন্দুজাতি যবনদের দুঃশাসনকে কিরূপ ভয়ানক ভাবতেন তা উক্ত উপমা দিয়ে বুচতে পারি। ভাগ‍্যের কি নির্মম পরিহাস ভরতকূল আরো একবার গোরা যবনদের পদতলে পতিত হয়েচিল। জয়পুরের জগৎসিংহ, মরুরাজপুত মানসিংহ বা মহারাষ্টের নৃপতি নয়, চিতোরনন্দিনী পদ্মিনীর আত্মত‍্যাগের প্রেরণাই কৃষ্ণকুমারীকে সুরালোকে পথে নিয়েচ‍্যে। ভেবে দেখেচ্চি, বড়লক্ষ‍্যে সর্বোচ্চ ত‍্যাগই মহাকালের পত্রপল্লবে অঙ্কিত রয়ে যায়। ত না হলে, শতশত বৎচ্চর পশ্চাদে আমরা চি

মেঘনাদবদ কাব‍্য : মাইকেল মধূসুদন দত্ত

Image
 ভাবের প্রবাহমানতায় ও যতিচিহ্নের বৈচিত্র্যময় ব‍্যবহারে অমিত্রাক্ষর ছন্দে সৃজিত মেঘনাদবদ বঙ্গরত্নস্বরূপ। এই প্রথম বাঙ্গলায় মহাকাব‍্য পড়লাম। প্রাতঃপ্রথম অংশুমালীর কিরণ স্পর্শে আরম্ভ করেছি। কিংশুক যেমতি আপন সৌন্দর্য মহিমায় ভূমে নত হয়। সারাদিন নিশিতে আমিও তেমতি মেঘনাদের হ্রসযতি হতে দীর্ঘযতি। অপূর্ণপর্বের চন্দন রেখা ধরে পূর্ণপর্বের জলধিতে সিক্ত হলাম। অষ্টক মাত্রার অসুরে নিনাদ শুনে ষষ্টকমাত্রার রামববিলাপে পরাণ বিধিঁলো। প্রতি অক্ষরে অক্ষরের প্রগাঢ় শ্বাসাঘাতে মহামায়ার জালে জড়ালাম। ভালো আর মন্দের বিভেদরেখা অঙ্কন করা পুরাণপদে কঠিনতর। তাই তো রক্ষঃপুতও মায়ারজঞ্জালে বাধা পড়ে। বৈদিক সাহিত‍্যের কাহিনি ভঙ্গি ও বিন‍্যাস কৈলাসশৃঙ্গচূড়ার মতই অনন্ত মধুসাখা তুল‍্য। হে বরদে, তব বরে। চোর রত্নাকর।। ৬+৮ কাব্যরত্নাকর কবি!। তোমার পরশে,।।৬+৮ সুচন্দন-বৃক্ষশোভা। বিষবৃক্ষ ধরে!।।৬+৮ হায়, মা, এহেন পুণ্য। আছে কি এ দাসে?।।৬+৮ - প্রথম সর্গ (২০-২৩ 🐦বাল্মীকি যেমত'ব, স্বরস্বতী বরে কাব‍্য-চূড়ামণি, তেম' মধুস্বর মাগে। এহেন সভায় বসে। রক্ষঃকুলপতি,।।  ৮+6 বাক্যহীন পুত্রশোকে!।  ঝর ঝর ঝরে।। ৮+৬ অবিরল

শর্মিষ্ঠা : মাইকেল মধুসূদন দত্ত

Image
 শ্রী বঙ্কিম মশাইয়ের সকল ভারতভূমির ঐতিহাসিক আখ‍্যান উপখ‍্যানরথ পাড় হইয়া কাব‍্য ও নাট‍্যের বরপুত্র শ্রী মধুসূদনদার পূর্ণভূভারতের পৌরাণিক কাহিনীর বাতায়নে অসামান‍্য ক্রীড়ায় মাতিয়া উঠিলাম। বিস্ময়ের সম্বন্ধ  হইলো বঙ্কিম যথায় ইতিহাসের সত‍্যরূপকে পূর্ণসাধু আনুষ্ঠানিক আলংকারিকতায় নিমার্ণ করিতে চাহিয়াছেন। মধুসূদন তথায় পুরাণগাথাঁকে অর্ধচলিত ধারায় প্রজ্বলিত করিয়াছেন। যদ‍্যপিও বঙ্কিমবাবুর মধুসূদনদার সমসাময়িকে লিখতেন, তত্রাচ তারা ভিন্ন ভিন্ন শব্দসম্ভার আর বাক‍্যশৈলীতে সাহিত‍্য সৃজন করেছেন।  বঙ্কিম যেখান‍ে তৎসমবহূল বিশেষ‍্য-বিশেষনের সাথে সাধুরীতির সর্বনাম, অব‍্যয় ও ক্রিয়াপদ ব‍্যবহার করেছেন; মধুদা সেখানে তৎসমসহিত সর্বনাম ও অব‍্যয়ের চলিতরূপ প্রয়োগ করেছেন। আশ্চর্য হলো! মধুসূদন ক্রিয়াপদে "ছ" এর পরিবর্তে "চ" এর ব‍্যবহার অনেকটা কথ‍্যরূপের কাছাকাছি মনে হলো। যেমন বঙ্কিমীয় কহিয়াছে হলো মধুসূদনীয় কচ‍্যে। তদরূপ করিবো হলো করবো।  "য-ফলার" যর্থার্থ ব‍্যবহারও ভাষার লেখ‍্যরূপকে করেছে বৈচিত্রপূর্ণ। হয়তোবা চ ও য-ফলার ব‍্যবহার তদকল‍্যে ছিল কথ‍্যরীতির অর্ন্তভূক্ত। সামান‍্য সন্ধান করে সত‍্যত

সীতারাম : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Image
 :: "উপন্যাসলেখক অন্তর্বিষয়ের প্রকটনে যত্নবান হইবেন-ইতিবৃত্তের সঙ্গে সম্বন্ধ রাখা নিষ্প্রয়োজন।" -ঐতিহাসিক উপন‍্যাস লিখিবার এক মহামূলমন্ত্র যেন লিখিয়া গিয়াছেন।  ::“হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে?” হিন্দু জাতীয়তাবাদের এক শুদ্ধ শ্লোগান যেন আমার কর্ণকুহুরে মর্মরপ্রস্রথেরতূল‍্য বাজিতে লাগিল। ::"হিন্দু মুসলমানকে গালি দিতে লাগিল, মুসলমান হিন্দুকে গালি দিতে লাগিল। কেহ বলে, “আল্লা!” কেহ বলে “হরিবোল |” কেহ বলে, “আজ হবে না, ফিরে যাই |” কেহ বলে, “ঐ এয়েছে দেখ্ |” সেই শৈশবকাল হইতে শ্রুত হইয়া আসিতেছি অভিন্ন ভারতে হিন্দু মুসলমান এক মধুরপ্রীতির সহিত বসবাস করিয়া আসিতেছে। বিভেদ যাহা সৃজন হইয়াছে তাহার জন‍্য বৃটিশরাজ দায়ী। কিন্তু এই পাঠ‍্যাংশ যেনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অনন‍্য দলিলস্বরূপ। ::"নূতন নগরীর নাম “মহম্মদপুর” রাখিয়া, হিন্দু ও মুসলমান প্রজার প্রতি তুল্য ব্যবহার করিতে লাগিলেন, তখন মুসলমানের অপ্রীতিভাজন হইবার আর কোন কারণই রহিল না। -প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার কি করিয়া হিন্দু মঠে রূপান্তরিত হইলো। হিন্দু রাজ‍্য কেমনরূপে মুসলমান নাম অবলম্বন করিলো। সর্বোপরি  হিন্দু-মুসলমান সহাবস্থান ঐত‍িহ‍

কৃষ্ণকান্তের উইল : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Image
🌺আজ বঙ্কিমবাবুর কৃষ্ণকান্তের উইল পড়িতে গিয়া এক মহাবিপত্তি ঘটিল। আন্তর্জাতিক বুকার দীর্ঘতালিকার বহিঃপ্রকাশকে এক প্রকারান্তে মনের আড়লে রাখিয়া দিলাম। নীলৌৎপল যে প্রকারে জলের আড় ভাঙ্গিয়া আপনি ফুটিয়া উঠে। সেইরূপ আমার বোধপল্লবে ভ্রমরের ন‍্যায় এক ভাবনা অচিরাৎ খেলিয়া গেলো। ভাবিলাম এইকালে বঙ্কিম জীবন্ত থাকিলে অথবা বুকার তদসময়ে বিরাজমান থাকিলে কৃষ্ণকান্তের উইল উপন‍্যাসটি নিশ্চিতরূপে বুকারের দীর্ঘতালিকায় অর্ন্তভূক্ত থাকার সম্ভাবনা ফুটিয়া উঠিত। হয়তো বা বাঙ্গলায় বঙ্কিমবুকার দেখিলেও দেখিতে পাইতাম। তাই এই বেলায়, দীর্ঘতালিকার সকল উপন‍্যাসিক, অনুবাদক এবং সুবিশেষরূপে গল্পের চরিত্রসকলকে গুলাব পাশের বঙ্কিমীয় অভিনন্দন🌺 বাঙ্গলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, হিন্দি, উর্দু ও ইংরেজী ভাষার শব্দাবলী কৃষ্ণকান্তে সম‍্যভিব‍্যবহৃত হইয়াছে। সমগ্র বঙ্কিম পাঠকালে ভাষার এই সম্মিলিত আয়োজন না দেখিয়া বারংবার মনে মনে ভৎসনা করিয়া আসিতেছিলাম। কনককাঞ্চনরোহিণী ও কৃষ্ণকালোভ্রমরকে রমণীয় ও মানবীয় রূপের নারী চরিত্রদ্বয় যেন এক প্রতীকি তাৎপর্য বহন করে। 📚কৃষ্ণকান্তের উইল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বঙ্গদর্শন, ১৮৮২ (১৮৭৮)

দেবী চৌধুরানী : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের

Image
 দেবী চৌধুরাণীর প্রথামাংশে জনাব বঙ্কিম সাহেবের অন‍্যান‍্য উপন‍্যাস হইতে অধিকতর কাঞ্চনাভাপৃর্ণ ও মনোমুগ্ধকর। কিন্তু শেষাংশ যেনো পূর্ণবর্ষার জলকল্লোলের মতো তর তরিয়ে বয়ে গেলো আর একনিমিষে সমাপ্ত হইলো। বাংলায় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর; মুসলিমসাম্রাজ‍্যের পতন; ইংরেজশাষনের প্রতিষ্ঠার এক রূঢ়যুগসন্ধিক্ষণের এক শৈল্পিক দলিল দেবী চৌধুরাণী।  নিষ্কাম যোগার্থ লাভের নিমিত্তে শয়ন, বসন, স্নান, নিদ্রা পঠন সম্বন্ধে প্রফুল্ল যেভাবে প্রশিক্ষণ লাভ করিল তা এক অবিশ্বাস্য পদ্ধতি। বিশ্ববিদ‍্যালয়ে দর্শন অধ‍্যায়নকালীন ভারতীয় দশর্নের পড়িয়াছিলাম। দেবী পড়িববার মনোদ্ভোদ হইলো আরেকবার পুনঃপাঠই শ্রেয়। "তখনকার গ্রেপ্তারি পরওয়ানার জন্য বড় আইন-কানুন খুঁজিতে হইত না, তখন ইংরেজের আইন হয় নাই। সব তখন বে-আইন।" আইনশৃঙ্খলা সম্বন্ধীয় তদসময়বর্তী এই মন্তব্য ভবিষ্যতে কার্যে আসিবে। "এখন ঢাকাই কাপড়ের তত মর্যাদা নাই–কিন্তু এক শত বৎসর আগে কাপড়ও ভাল হইত, উপযুক্ত মর্যাদাও ছিল। ইহার পরিধানে একখানি পরিষ্কার মিহি ঢাকাই, তাতে জরির ফুল। তাহার ভিতর হীরা-মুক্তা-খচিত কাঁচলি ঝক্মনক করিতেছে। নদীর জলে যেমন চিকিমিকি–এই শরীরেও তাই।" - দিল্ল

মৃণালিনী : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Image
"কণ্টকে গঠিল, বিধি, মৃণাল অধমে। জলে তারে ডুবাইল পীড়িয়া মরমে ||” বঙ্কিম কি মনে করি সঙ্গীত রচনা করিলেন না কে জানে? কিন্তু উপন‍্যাসর পত্রে পত্রে কাহিনির পরতে পরতে গানের ব‍্যবহারে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। মৃণালিনীতে গীতসংযোজনে যেন চরম উৎকর্ষতা লাভ করিয়াছেন। মৃণালিনীকে কি বাংলায়  আধুনিক যুগের প্রথম গীতোপন‍্যাস বলায় যায়? "মহারাজ, তুরকীয়েরা আর্যাবর্ত প্রায় সমুদয় হস্তগত করিয়াছে। আপাতত: তাহারা মগধ জয় করিয়া গৌড়রাজ্য আক্রমণের উদ্যোগে আছে |” "শাস্ত্রে ঋষিবাক্য প্রযুক্ত আছে যে, তুরকীয়েরা এ দেশ অধিকার করিবে। শাস্ত্রে আছে অবশ্য ঘটিবে -কাহার সাধ্য নিবারণ করে? তবে যুদ্ধোদ্যমে প্রয়োজন কি?” সেই প্রাক:আরম্ভ হইতে প্রথমে আর্য দ্বারা অর্নায; যবন (অহিন্দু মনুষ‍্য), দ্বারা আর্য; ইংরেজ, আর্য ও যবন, এবং অদ‍্যকালে আর্যে অনার্যে বা যবনে অযবনে সব লংকাকান্ড বাধিয়াছে। বখতিয়ার খিলজিকে নিয়ে মৃণালিনীর পূর্ব্বে কি ক‍োন উপন‍্যাস লিখিত হইয়াছে। বৌদ্ধদের প্রদোষকালিন অমনিশার দিক ও অবস্থা জানিতে পারিয়া দুঃখভারাক্লান্ত হইলাম। বাংলায় বৌদ্ধবিহার নির্মূল, মূলোৎপাটন সম্বন্ধ এটাই কি প্রথম  উপন‍্যাস। চতুর্থখন্ডের চতুর

রাধারাণী : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Image
 ম্লেচ্ছ ও যবনদের হাত হইতে অবশেষে বঙ্কিমচন্দ্র তার চরিত্রদের মুক্তি দিয়াছেন। কিন্তু আত্মপরিচয় গোপন ও আত্মভাব আগ্রহ‍্য করিতে হইবে, এই অভিসম্পাত ললাটে নিয়া যেন বঙ্কিমবাবুর চরিত্ররা জন্মলাভ করিয়া থাকে। 📘রাধারাণী (১৮৮৬) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়  বঙ্গদর্শন, ১২৮২ বাং।

যুগলাঙ্গুরীয় : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Image
 ক্রমে ক্রমে বঙ্কিমীয় বাঙ্ময় শব্দবন্ধনীর দ্বারা আমি যেন সম্মোহিত হয়ে পড়িতেছি।  ধ্বনি ও শব্দের পুনঃবিন‍্যাস করিয়া, সর্বনাম ও অব‍্যয় পদকে তদসামঞ্জস‍্য বিধান করিয়া, সাহিত‍্যিক নব‍্যভাষা সৃজন করা যাইবে কিনা নিরীক্ষণ, পরীক্ষণ ও সৃজনের নিমিত্তে গাঢ় অভিনিবেশ করিতে হইবে। তৎপরর্বতীকালে রবীন্দ্র, নজরুল, বিভূতি, মানিক, জীবনান্দ প্রমূখ কি করিয়া বাঙ্গলা নতুনরূপে সজ্জিত করিয়াছেন তাহা তপস‍্যাসহকারে অবলোকন ও উপলব্দি করিতে হইবে। যুগলাঙ্গুরীয়কে কি পূর্ণ উপন‍্যাস বলিয়া গণ‍্য করা যাইবে।  উপন‍্যাসের নাটকীয় আকার ও উপাদানসমূহ সচ্ছরূপে নিরীক্ষণ করিলে ইহা পরবর্তীতে চলচ্চিত্রযুগে হইতে অসংখ‍্য চিত্রনাট্যের অনুপ্রেরণা যোগান দিয়াছে বলিয়া স্বীকারর্য। 📘যুগলাঙ্গুরীয় (১৮৭৪) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়  বঙ্গদর্শন, ১২৮০ বাং।

চন্দ্রশেখর : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

Image
"মাথার উপরে, শব্দতরঙ্গে আকাশমণ্ডল ভাসাইয়া, পাপিয়া ডাকিয়া গেল। " - আজি প্রভাতে, নিদ্রাভাঙ্গিলে পালঙ্কে শয়নাবস্থায়, ক্রমোবুক লেপটপে, বঙ্কিমমশাইয়ের চন্দ্রশেখর পাঠ আরম্ভের কিঞ্চিৎ পরে, লক্ষ করিয়া দেখিলাম যে ইহার এক একটি বাক‍্যের পদবিভাজন ভিন্নতর। অপেক্ষাকৃত ভাবে পাঠ করিতে মন্দ নহে। এইরকম গঠনিক বাক‍্য পূর্ব্বে পড়িয়াছি কিনা স্মরণে আসিল না। তদরূপ পড়িবার সময় অনুভূত হইলো যেন শব্দগুলো কানে শুনিতে পাইতেছি। কয়েকঘন্টা অতিক্রম হইলে, যখন আমার অাপিসের বিক্রয় প্রতিনিধি সহিত গুলশান লেকের পার্শ্বরাস্তা ধরিয়া, বাধাই সেতুর উপর দিয়া অতিক্রম করিতেছিলাম। অচিরাৎ  আমাকে জিঞ্জাসা করিলেন, জলের উপর ঐ পক্ষিদলের নাম কি বলিতে পারিবেন? আমি বলিলাম, বকপক্ষি। তিনি মৃদু হাসিয়া কহিলেন, তা নহে। পানকৌড়ি। দেখিতে তো বকবৎ,আমি বলিলাম। তিনি খানিক নিশ্চুপ থাকিয়া, স্বগোক্তিস্বরে উচ্চারণ করিলেন- "পানকৌড়ি, পানিতে থাকে, মাছ খায়।" আমি চমকিয়া উঠিলাম। মনে হইলো, ঠিক এইরূপ থামিয়া থামিয়া, ক্ষণ প্রলম্ব করিয়া,  আজ সূর্যপ্রাতে, কেহ কি আমাকে কিছু বলিয়াছিলো?  কয়েক কদম হাটিবার পশ্চাদে স্মরণে আসিল। চন্দ্রশেখরে পড়িয়া