চার অধ‍্যায় : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 চার অধ‍্যায়ে প্রেম ও বিপ্লব যেন ঊষাকালের তরল আধার ক্রমে অস্ফুট আলোয় অবগাহনে নামে, ঠিক তেমন বোধ হইলো। শেষের কবিতার অমিত লাবণ‍্যের চার অধ‍্যায়ের অতিন এলার প্রেম দহন আর ত‍্যাগ বোধহয় অধিক দ‍্যোতনাময়।


রবীন্দ্রসাহিত‍্য পড়তে পড়তে একটা ভাবনার উদয় হলো। এই যে রবীন্দ্রনাথের  চরিত্রদের মনের এতো সংবেদনশীল প্রকাশ। আবেগের এতো আলংকারিক ব‍্যাঞ্জনা। তা কি সত‍্যি ঐ সময়ের মাটির মানুষের প্রতিচ্ছবি? না কি লেখকের কল্পনার সাহিত্যিক অধিকার? দুটোর যেটাই হউক না কেন। আজ এই বেলায় আমি যদি সেই বেলার বাস্তব বা অবাস্তব, যে চিত্রই অঙ্কন করতে যাই কেন, আমাকেও কি সেই সময়ের আবেগকে ধরতে হবে? যদি ধরতেই হয় তাহলে, যে কোন সময়ের সবকিছুকে চিত্রিত করার জন‍্য নানা উপাদান বিদ‍্যমান। কিন্তু আবেগকে আনতে গেলে লিখিত উপরণের চেয়ে অধিক শ্রেয় কোন মাধ‍্যম কি জগতে আছে? 


সাহিত‍্য ও শিল্পের মূল‍্য তো এই খানেই। যে সাহিত‍্য হচ্ছে মানবঅনুভূতির কালোতীর্ণ আধার।


"আমি আজ স্বীকার করব তোমার কাছে,–তোমরা যাকে পেট্রিয়ট বলো আমি সেই পেট্রিয়ট নই। পেট্রিয়টিজ্‌মের চেয়ে যা বড়ো তাকে যারা সর্বোচ্চে না মানে তাদের পেট্রিয়টিজ্‌ম কুমিরের পিঠে চড়ে পার হবার খেয়ানৌকো। মিথ্যাচরণ, নীচতা, পরস্পরকে অবিশ্বাস, ক্ষমতালাভের চক্রান্ত, গুপ্তচরবৃত্তি একদিন তাদের টেনে নিয়ে যাবে পাঁকের তলায়। এ আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এই গর্তর ভিতরকার কুশ্রী জগৎটার মধ্যে দিনরাত মিথ্যের বিষাক্ত হাওয়ায় কখনোই নিজের স্বভাবে সেই পৌরুষকে রক্ষা করতে পারব না যাতে পৃথিবীতে কোনো বড়ো কাজ করতে পারা যায়।” - অতীন।


দেশপ্রেম থেকে মহৎ কিছু আছে। যা দেশপ্রমের উন্মত্ততা থেকে মানুষের মর্যাদাকে রক্ষা করবে। আজ এই কালে সমগ্র বিশ্ব যখন প্রতিশ্রুত ভূমি প্রাপ্তির আশাভঙ্গে তালবেতাল। তখন এই উক্তিখানি আমারে কয়েকমুহূর্ত ভাবার দেয় অবসর।



📘চার অধ‍্যায়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

১৯৩৪।

Comments

Popular posts from this blog

Shoeshine [1946] : Vittorio De Sica

বুনোহাঁস : পলাশ মাহমুদ

Andaz [1949] : Mehboob Khan