মৃণালিনী : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
"কণ্টকে গঠিল, বিধি, মৃণাল অধমে।
জলে তারে ডুবাইল পীড়িয়া মরমে ||”
বঙ্কিম কি মনে করি সঙ্গীত রচনা করিলেন না কে জানে? কিন্তু উপন্যাসর পত্রে পত্রে কাহিনির পরতে পরতে গানের ব্যবহারে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। মৃণালিনীতে গীতসংযোজনে যেন চরম উৎকর্ষতা লাভ করিয়াছেন। মৃণালিনীকে কি বাংলায় আধুনিক যুগের প্রথম গীতোপন্যাস বলায় যায়?
"মহারাজ, তুরকীয়েরা আর্যাবর্ত প্রায় সমুদয় হস্তগত করিয়াছে। আপাতত: তাহারা মগধ জয় করিয়া গৌড়রাজ্য আক্রমণের উদ্যোগে আছে |”
"শাস্ত্রে ঋষিবাক্য প্রযুক্ত আছে যে, তুরকীয়েরা এ দেশ অধিকার করিবে। শাস্ত্রে আছে অবশ্য ঘটিবে -কাহার সাধ্য নিবারণ করে? তবে যুদ্ধোদ্যমে প্রয়োজন কি?”
সেই প্রাক:আরম্ভ হইতে প্রথমে আর্য দ্বারা অর্নায; যবন (অহিন্দু মনুষ্য), দ্বারা আর্য; ইংরেজ, আর্য ও যবন, এবং অদ্যকালে আর্যে অনার্যে বা যবনে অযবনে সব লংকাকান্ড বাধিয়াছে।
বখতিয়ার খিলজিকে নিয়ে মৃণালিনীর পূর্ব্বে কি কোন উপন্যাস লিখিত হইয়াছে।
বৌদ্ধদের প্রদোষকালিন অমনিশার দিক ও অবস্থা জানিতে পারিয়া দুঃখভারাক্লান্ত হইলাম।
বাংলায় বৌদ্ধবিহার নির্মূল, মূলোৎপাটন সম্বন্ধ এটাই কি প্রথম উপন্যাস।
চতুর্থখন্ডের চতুর্থ পরিচ্ছেদ : যবনদূত-যমদূত বা তুর্কিযোদ্ধাদের অবয়বের যে বর্ণনা করিয়াছেন তা বোধকরি আমার মেসোপটেমিয়া সমরমঞ্চের গবেষণায় অপরিষেশ কার্যে আসিবে।
আর কতক সহজে তুর্কিরা গৌড়জয় লাভ করিলো। সত্যটা কিরূপ? বর্তমানকে নিরপেক্ষরূপে লিপিবদ্ধ করা কতক আবশ্যক তাহা আজ অন্ত:করণ করিলাম।
আর্য ও অর্নাযাদের ইসলামধর্মান্তরীকরণ নিয়ে আলেখ্য পড়িয়া চমকিত হইলাম।
বঙ্কিমোপন্যাসে হেমচন্দ্র বোধকরি সর্বাধিক অধৈর্যশীল পুরুষ।
"এই অশোক ফুলের স্তবকের মত। আপনার গৌরবে আপনি নম্র।"
মনোরমা ও মৃণালিনী যেন অশোকপুষ্প ভারে সমহিমায় নত।
এতো সকোমল উপমা যদি যথাযথ সমাদর না পাইয়ে গ্রন্থপত্রে লুকাইয়া পুরাতন ও অপাঠ্য রহিয়া যাইবে। তাই আজ ক্ষণে ক্ষণে আমি শুধু আশোকবৃক্ষ দেখিয়া পরাণ জুড়াইয়াছি।
📘মৃণালিনী (১৮৬৯)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment