দুই বোন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথের শেষপর্যায়ের উপন্যাস গুলো বড়গল্প থেকে একটু বড় আর ক্ষুদ্র উপন্যাসিকা থেকে একটু ছোট হয়ে এসেছিল। রচনারীতি আর বর্ণনাভঙ্গী হয়ে উঠেছে অধিক প্রাবন্ধীয়। চরিত্রবিন্যাস বহুমাত্রা থেকে নেমে এসেছে সরলরৈখিক পথে। সমকালীন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে আখ্যানবস্তুর প্রধান আশ্রয়। আখ্যানপর্ব গুলো যেন আরো স্পষ্ট করা হয়েছে।
দুইবোনের নরনারীর প্রকৃতি ও প্রবৃত্তিতে যে অসংখ্য ভেদ বিভেদ তারই রূপরেখা হয়ে উঠেছে। এখানে মানব মানবীর বাহ্যিক ঘাত-প্রতিঘাতে ছাড়িয়ে ব্যাক্তির অভ্যন্তরীণ লক্ষণ-উপলক্ষণের আভাস প্রদান করা হয়েছে। পূর্ববর্তী উপন্যাস গুলোতে চতুর্মাত্রিক চরিত্ররীতি থেকে শশাঙ্ক-ঊর্মিমালা-শর্মিষ্ঠা-নীরদের বর্ষাঋতু ও বসন্তঋতুর বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হয়েছে।
আমি তো মনে করি, নীরদ-শর্মিষ্ঠা হলো জার্মান ফিলোসফার কান্টের কর্তব্যের খাতিরে কর্তব্য'র ভাববাদী কঠোর অনুশাসন পালনে ব্রত। অন্যদিকে ঊর্মিমালা ও শশাঙ্ক হলো ইংরেজ দার্শনিক বেন্থাম ও মিলের ম্যাক্সিমাম হ্যাপিন্যাস ফর ম্যাক্সিমাম নাম্বার এর প্রায়োগিক উদারনীতির অনুসেবায় আবদ্ধ।
কিন্তু একটি প্রণয়োপাখ্যান হিসাবে দুই বোনের শর্মিষ্ঠা-শশাঙ্ক-ঊর্মিমালা-নীরদের ফ্রেমটা শেষ পর্যন্ত মালঞ্চের নীরজা-আদিত্য-সরলা-রমেনের ফ্রেমের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলো।
গল্প থেকে উপন্যাসের উপাদান, বিন্যাস, ব্যাপ্তি, আকার ও গঠন অধিকতর বেশি থাকায় একে উপন্যাসের শ্রেনীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে মনে করি।
রবীন্দ্রনাথ কি তার উপন্যাসের বাঙালা বাক্যের মাঝে হঠাৎ হঠাৎ ইংরেজি ওয়ার্ডস ব্যাবহার শুরু করেছিলেন। পূর্বপাঠে অল্পবিস্তর চোখে পড়েছে। তখন কিছুটা আরোপিত ও আলংকারিক মনে হয়েছে। কিন্তু দুইবোনে এমন বাংলিশ বাক্য পড়ে মনে হলো, এই প্রয়োগটা যেন স্বাভাবিক ও ব্যাবহারিক অনুষঙ্গ।
📘দুই বোন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৯৩৩।
Comments
Post a Comment