চতুরঙ্গ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চতুরঙ্গ পাঠ শুরু করিবার পূর্ব মুহূর্তে ভাবিতেছিলা যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪) শুরু হওয়ার দুই বৎসর পরে ইহার প্রকাশকাল (১৯১৬)। ইতিমধ্যে ভারতীয় সৈনিকগণ সমরপ্রান্তরগুলোতে দলে দলে ছড়িয়া পড়িয়াছে। তাই ঐ বিষয়ে উপন্যাসখানি কোন উল্লেখ্য পাইবো, ঐ ছিল প্রত্যাশিত। যেহেতু মেসোপটেমিয়া যুদ্ধমঞ্চে ভারতী তথা বাঙালি পল্টনের সম্পৃক্ততার উপর এখনখানি উপন্যাস লিখিবো বলিয়া, অনেকদিন যাবদ গবেষণা করিয়া আসিতেছি। যুদ্ধের সরাসরি উল্লেখ না থাকিলে যুদ্ধজাহাছ ও যুদ্ধ কাপ্তানের সম্বন্ধে একটা তুলনার উল্লেখ্য পাঠ করিয়া দুধের স্বাদ ঘোলে মিটায়া লইলাম।
হিন্দর্ধমের বিপরীতে ব্রাক্ষ্ম আচারের নাস্তিকতা বরাবরের মতোই উপস্থিত। ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিষয়ক একটা অ্যরিস্টটলীয় অবরোহ যুক্তিবাক্য সমসাময়িক নীটৎশের "ঈশ্বর মৃত" এই ভাবটাকেই যেন সজীব করিয়া তুলিল। বাঙলায় এমন স্পষ্ট বচন এক দুঃসাহসিক ব্যাপার বটে। এখনকার কালে এই বাক্য রচনা ভাবনাতীত বিষয়।
কাহিনি বিন্যাস কতকটা সৃজনশীল হইলো। কতকটা মননশীলতায় পূর্ণ তাহার হইতে এই নীতিদীর্ঘ উপন্যাসটির গঠনিক দিকটা প্রশংসনীয়।
কাহিনির পরতে পরতে শেক্সপিয়র, মিল্টন, স্কট, মিল, বেন্থাম, স্পেন্সার প্রমুখ ইংরেজ লেখক ও দার্শনিকদের প্রত্যক্ষ উল্লেখ থেকে অনুমেয় যে সময়টা পাশ্চাত্য ভাব ও বুদ্ধি দ্বারা বাঙালী কতটা প্রভাবিত হইতেছিল। অনেকটা মধুসূদনের একেই কি বলে সভ্যতা? প্রহসনের প্রচ্ছন্ন ছায়া দেখিতে পাইলাম।
চতুরঙ্গ সম্ভবত বাঙলায় প্রথম মরমী উপন্যাস। ইহার অপর নাম হইতে পারিত অরূপের সন্ধানে অসীমের পথে। গীতাঞ্জলির অনেক ভাবের গদ্যরূপ বলিতে পারি এই চতুরঙ্গকে। অন্যদিকে অস্পশ্যতা কেন্দ্রিক এক অভূতপূর্ব উপাখ্যান বলিতে পারি। নারীর মর্যাদা নিয়া যেসকল দৃশ্যের অবতারণা করা হইয়াছে, ইহাতে এক এক অন্যন্য নারীবাদী আখ্যান হিসাবে অভিহিত করিতে পারি।
চিঠিতে "শ্রীচরণেষু" সম্বোধনে শচীত ভৎসনাসহকারে গুরুজনকে অতিরঞ্জিত অভিধায় জ্ঞাপন করা যে যৌক্তিক ব্যাখা প্রদান করিলেন। তাহা ঈদানিং কালে উপনিবেশিক পরাধীনতা ও বৈষম্যের প্রতীক "স্যার" সম্বন্ধীয় কালা কৌতুকীয় লঙ্কাকান্ডের সহিত প্রাসঙ্গিক বলিয়া বোধ হইলো। এই দিক হইতে রবীন্দ্রভাবনা বরাবরই অগ্রগামী ও সমসাময়িক।
📙চতুরঙ্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৯১৬।
Comments
Post a Comment