সীতারাম : বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
:: "উপন্যাসলেখক অন্তর্বিষয়ের প্রকটনে যত্নবান হইবেন-ইতিবৃত্তের সঙ্গে সম্বন্ধ রাখা নিষ্প্রয়োজন।"
-ঐতিহাসিক উপন্যাস লিখিবার এক মহামূলমন্ত্র যেন লিখিয়া গিয়াছেন।
::“হিন্দুকে হিন্দু না রাখিলে কে রাখিবে?”
হিন্দু জাতীয়তাবাদের এক শুদ্ধ শ্লোগান যেন আমার কর্ণকুহুরে মর্মরপ্রস্রথেরতূল্য বাজিতে লাগিল।
::"হিন্দু মুসলমানকে গালি দিতে লাগিল, মুসলমান হিন্দুকে গালি দিতে লাগিল। কেহ বলে, “আল্লা!” কেহ বলে “হরিবোল |” কেহ বলে, “আজ হবে না, ফিরে যাই |” কেহ বলে, “ঐ এয়েছে দেখ্ |”
সেই শৈশবকাল হইতে শ্রুত হইয়া আসিতেছি অভিন্ন ভারতে হিন্দু মুসলমান এক মধুরপ্রীতির সহিত বসবাস করিয়া আসিতেছে। বিভেদ যাহা সৃজন হইয়াছে তাহার জন্য বৃটিশরাজ দায়ী। কিন্তু এই পাঠ্যাংশ যেনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার অনন্য দলিলস্বরূপ।
::"নূতন নগরীর নাম “মহম্মদপুর” রাখিয়া, হিন্দু ও মুসলমান প্রজার প্রতি তুল্য ব্যবহার করিতে লাগিলেন, তখন মুসলমানের অপ্রীতিভাজন হইবার আর কোন কারণই রহিল না।
-প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার কি করিয়া হিন্দু মঠে রূপান্তরিত হইলো। হিন্দু রাজ্য কেমনরূপে মুসলমান নাম অবলম্বন করিলো। সর্বোপরি হিন্দু-মুসলমান সহাবস্থান ঐতিহ্য নির্মাণ ইতিহাসের এক বঙ্কিমীয় সাক্ষী যেন এই সীতারাম আখ্যানভূমি।
:::"যাহা পরীক্ষিত, তাহা সীমাবদ্ধ; যাহা অপরীক্ষিত, কেবল অনুমিত, তাহার সীমা দেওয়া না দেওয়া মনের অবস্থার উপর নির্ভর করে। তাই নূতনের গুণ অনেক সময়ে অসীম বলিয়া বোধ হয়। তাই সে নূতনের জন্য বাসনা দুর্দমনীয় হইয়া পড়ে। যদি ইহাকে প্রেম বল, তবে সংসারে প্রেম আছে। সে প্রেম বড় উন্মাদকর বটে। নূতনেরই তাহা প্রাপ্য। তাহার টানে অনেক সময়ে ভাসিয়া যায়"
-প্রেম উপর এমন সদতত্ত্ব পৌরাণিক মহাকাব্যিক স্তবক ব্যাতীত তেমন পরিদৃষ্ট হয় না।
হিন্দু মুসলমানের বিভেদের গূঢ়সত্য খুড়িয়া দেখিতে চাহিলে এই উপন্যাসখানি পাঠককূলের জন্য অবশ্যপাঠ্য।
পশ্চিমে যেরূপ স্কট রহিয়াছে পূর্বে সেইরূপ বঙ্কিম বিরাজমান।
📙সীতারাম (১৮৯৪)
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
প্রচার, ১২৯১-৯৩ বাং।
Comments
Post a Comment