সূর্যকন্যা [১৯৭৫] : আলমগীর কবীর

 


বিমল রায়ের নির্বাচিত সিনেমা দেখছিরাম। তার নির্মিত শরচন্দ্রর পরিণীতা [১৯১৪] ছবির চিত্রনাট্যের সাথে অন্য ছবির চিত্রনাট্যের তুলনামূলক পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আলমগীর কবীরের পরিণীতা [১৯৮৬] দেখবো বলে ঠিক করলাম। কিন্তু ইন্টারনেটে কোথাও এর পূর্ণদৈর্ঘ্যর লিংক খুজে পেরাম না। ছবিটা খুজতে গিয়ে সূর্যকন্যা [১৯৭৫] এর কিছু অংশ দেখছিলাম। আর অবাক হচ্ছিলাম। উনার ভিজ্যুয়াল বোধ আর গল্পের সংলাপ বিমল রায়ের সাথে খুব বেশি তারতম্য নেই। ভেবেছিলাম ভারতের বিমল রায়ের পর বাংলাদেশের কোন পরিচালক দিয়ে শুরু করবো। মনে মনে ঠিক করেছিলাম জহির রায়হান থেকেই আরম্ভ করবো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলমগীর কবিরের সূর্যকন্যা দিয়েই শুরু করলাম।


সূর্যকন্যা [১৯৭৫] দেখার পুরোটা সময়ের ভাগে ভাগে একসময় মনে হলো এটি একটি  চিত্রশিল্পীর স্বীয় আর্দশে আপষহীন শ্রেণী সংগ্রাম ও উচ্চাভিলাষী পিতার ধনীশ্রেণীতে উত্তরণ আকাক্ষার গল্প। অনেকটা সমাজতন্ত্র ও পুজিতন্ত্রর যে দ্বন্দ্ব আমারা দেখতে পাই। কিছুক্ষণ পরে মনে হলো এটি একটি জাদুবাস্তবতার গল্প যেখানে লেলিন ও প্রতিমূর্তি বাস্তব ও কল্পনার সীমারেখো কেমন শিল্পিতরূপে তরল করতে করতে শেষাংশে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যায়। সূর্যকন্যার [রাজশ্রী বোস] অতিবাস্তবতা ও ইতিহাসের ধারায় নারীর ট্রাজিডি ও মনিকা বিশ্বাসের [জয়শ্রী] আধুনিক বিয়ের বিকল্প ব্যবস্থায়  লিভ-টুগেদারে পুরুষের সুবিধাবাদীতার বিপরীতে নারীর নিজস্ব আবেগ ও মর্যাদার মূল্য স্বরুপ যে প্লটকে সিনেমাটিক আদল দিয়েছেন। তাতে আমার মনে হয় সূর্যকন্যা [১৯৭৫] বাংলাদেশের প্রথম নারীবাদী আখ্যান। ঠিক যেমনটা সূর্যকন্যা কে বাংলাদেশের প্রথম জাদুবাস্তবশ্রেনীর চলচ্চিত্র বলে মনে হয়। আর মানব ইতিহাসের ন্যারেটিভকে ভিজুয়ালইজেশনের জন্য অ্যানিমেশনের ব্যবহার ছবিাটকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে। খুব সম্ভবত বিমল রায়ের সুজাতায় [১৯৫৯] প্রথম অ্যানিমেশনের ব্যবহার দেখেছিলাম।


গল্পের কাঠামো থেকে শুরূ করে সিনেমাটিক স্টাইলের দিক দিয়ে সূর্যকন্যাকে বাংলাদেশের প্রথম উত্তর-আধুনিক চলচ্চিত্র বলা যায়। অস্তিত্ববাদী চেতনা যৌনতাকে যেভাবে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিকতায় প্রকাশ করা হয়েছে তা এক কথায় প্রথাবিরোধী সাহসিক ব্যাপার। আজ প্রায় পাচঁ দশক পরে প্রেম ও যৌনতাকে যদি ঠিক তার কাছাকাছি পর্যায়ে সিনেমার পর্দায় প্রকাশ করা হয় তাহলে পুর্বের থেকে অধিকরুপে যে প্রতিক্রিয়া আসবে তা নিশ্চিত বলা যায়। সেই সময়ে এর কেমন প্রতিক্রিয়া ছিল তা একবার খোঁজ নিতে হবে।


ফজলে সাহাবুদ্দিনের গীত সত্যসাহার সুরেআমি যে আধারে বন্দিনী’ চেনা চেনা লাগে তবু অচেনাগান সেই সময়ের সঙ্গীতের সোনালি সময়ের পরিচয় বহন করে। আর শেষাংশে আলমগীর কবীরের ক্যামিও আমাকে অনেকটা বিমূঢ় করে দিলো। সেই সময়ের সিনেমার ধারায় এটা একটা বিশেষ সংযোজন। অনেকটা সিনেমা অথরের স্বাক্ষর যেন।

 

সূর্যকন্যা [১৯৭৫]

আলমগীর কবীর

বাংলা, বাংলাদেশ ও ভারত।


Comments

Popular posts from this blog

Shoeshine [1946] : Vittorio De Sica

বুনোহাঁস : পলাশ মাহমুদ

Andaz [1949] : Mehboob Khan