পরিণীতা [১৯৫৩] : বিমল রায়

 


সাহিত্যের কাহিনিকে যখন সিনেমায় রপান্তরিত করা হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই সিনেমাটিক স্বারসত্তা ও  আকারের থেকে পাঠক ও দর্শক উভয়েরই দৃষ্টি থাকে সাহিত্যর কাঠামো ও নির্যাস কি সঠিকভাবে বজায় রাখা হয়েছে কিনা। কিন্তু আমার মনে হয় সাহিত্যর কাহানি যেমন কল্পনা ও শব্দের দ্বারা সৃষ্টি হয়। তেমনি সিনেমা প্রযুক্তি ও চিত্রের সীমানায় বন্দী। তারপর আছে মূলধন ও মুনাফা অর্জনের স্বতস্ফূর্ত ও বাড়তি আকাঙ্ক্ষা। তাই বইয়ের পাতাকে হুবুহু থিয়েটারের পর্দায় সুপারইমপোজ করা বা এর প্রত্যাশা করা আমার কাছে সমীচীন মনে হয় না। তবে কেউ যদি সফলভাবে করতে পারে তাকে তো আলাদা অভিনন্দন দিতেই পারি।

 

শরৎচন্দ্রর পরিণীতা [১৯১৪] অবলম্বনে বেশ কয়েকটি সিনেমা আজ অবদি তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে বিমল রায়ের পরিণীতা [১৯৫৩] অনেকটা মূলের কাছাকাছি ছিল। তবে মীনাকুমারি ও অশোক কুমারের চেহেরা গল্পের তরুনী ললিতা ও যুবক শেখরের কাল্পনিক অবয়বের সাথে কেমন যেন অমিল ঠেকলো। কিন্তু অভিনয় ছিল যর্থাথরূপে পরিপক্ক। পরবর্তীতে অজয় করের পরিণীতা [১৯৬৯] ছবিতে মৈৗসুমী চ্যাটার্জি ও সৈৗমিত্র চ্যাটার্জিকে অধিক অল্পবয়সী ও অভিনয়ের জড়তায় পূর্ণ বলে মনে হলো। আর প্রদীপ সরকারের পরিণীতা [২০০৫] তে কাহিনিকে যেমন করে আধুনিক যুগের উপযোগী করে তোলা হলো। সাথে সঙ্গীতের বৈচিত্র। বিদ্যা বালান ও সাইফ আলী খানের অভিনয় মীনাকুমারি ও অশোক কুমারের আবহকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবপর ছিলো।

 

বিমল রায় যেভাবে শেখরকে দিয়ে ললিতাকে বারান্দা দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। তার মাকে বলার জন্য যে তাদের আগেই মালা বদল হয়েছে। সেখানে অজয় কর বইয়ের কাহিনিকে অক্ষয় রেখেছে। ঠিক এই জায়গাটা বই থেকে সিনেমার নাটকীয় ক্লাইমেক্স আলাদা। শেখর যখন তারা মায়ের কাছে সত্য বলে দেয়। তখন ললিতা পাশেই বসা থাকে যা বইতে পড়লে যতো ভালো লাগে কিন্ত পর্দায় অতটা বোধ হয় না। কিন্তু বিমল বাবু ললিতাকে টেনে আনার দৃশ‍্য‍টা সিনেমায় অন্যরকম উত্তেজনা তৈরি করে।


এর কারণ কি পর্দায় আমাদের কল্পনার সীমরেখা টেনে দেয়া আছে বলে?

 

 

বিমল রায়ের চিত্রনাট্যে নিচের তিনটি দিক থেকে শ্রেনীকরন করে দেখলাম গ্রন্থকে কি করে পর্দার জন্য রপান্তর করতে হয়। সাহিত্যর একজন একনিষ্ঠ পাঠক ও সিনেমার গুণগ্রাহী হওয়ায় দুটি ধারাকে তার নিজস্ব স্বত্তায় মূল্যায়ণ করা এবং দটি ধারার মিথস্ক্রিয়া কি করে পাঠক ও দর্শককে একই সাথে বিনোদন দিতে পারে তারা এক অনন্য উদাহরণ।

 

সংযোজন-

1.     কাহিনির মেজাজ অনুযায়ী সঙ্গীতের সংযোজন প্রশংসনীয়। বিশেষ করে আশা ভোসঁলে ও মান্না দের “চালে রাধে রানে” কাহিনি বা সংলাপ থেকেও যর্থাথ মনে হয়েছে।

2.     ললিতার বিয়ে ও কালীর পুতুলের বিয়ের মালা বদল ও শঙ্খধ্বনি সমান্তরালে নাটকীয় কাঠমোয় দেকানো হয়। সিনেমার এই টেকনিকটির টার্ম কি জানতে হবে। এখন পর্যন্ত এ রীতি অনুকরণ ও অনুসরণ করা হয়।



প্রতিস্থাপন-

1.     প্রারাম্ভে গুরুচরণের পঞ্চম কন্যার জন্ম ঘটনার বদলে নবীন রায়ের অর্থলোলুপতা, ধূর্ততা ও রূঢ়তা দিয়ে শুরু হয়।

2.     সমাপ্তিতে ললিতা ও ভুবনেশ্বরী একই ঘরে থাকে তার বদলে শেখর ললিতাকে বাহির থেকে টেনে নিয়ে এসে মায়ের কাছে সত্য খুলে বলে।

3.     গুরুচরণ  ব্রাহ্মধর্ম গ্রহন করে পণ প্রথা থেকে মুক্তির জন্য। কিন্তু সিনেমায় দেখিয়েছে গিরীনের সাথে ললিতার বিবাহ ঠিক করে গুরুচরণ যে সমাজ ত্যাগ করেছে।

4.     সমাজ সবসময় নিয়মরক্ষার কথা বলে কিন্তু বিপদে সহায়তা কে এড়িয়ে চলে। এই কথোপকথন গিরীন ও গুরুচরণের বদলে গুরুচরণ ও নবীন রায়ের মধ্যে দেখায়।


বিয়োজন-

1.     মালা বিনিময় পর শেখর ও ললিতার অভিসারে যে  প্রণয়দৃশ্য আছে তা বাদ দেয়া গয়েছে।

2.     শেখরের মন:পীড়া ও শেখর ও ললিতা বিবাহ গোপন ও রোমান্সকে স্বাভাবিক ও গ্রহনযোগ্য করার জন্য যে স্বগোক্তি তা বাদ দেয়া হয়েছে।

3.     গুরুচরণ  ব্রাহ্মধর্ম গ্রহন করে পণ প্রথা থেকে মুক্তির জন্য গিরীনের সাথে ললিতার বিবাহ ঠিক করে গুরুচরণ যে সমাজ ত্যাগ করেছে

 

 

পরিণীতা 

বিমল রায় [হিন্দি, ভারত,১৯৫৩]

পশুপতি চট্টোপাধ্যায় [হিন্দি, ভারত, ১৯৪২]

অজয় কর [বাংলা, ভারত, ১৯৬৯]

আলমগীর কবির [বাংলা, বাংলাদেশ,১৯৮৬]

প্রদীপ সরকার [হিন্দি, ভারত, ২০০৫]

 

 

 

 

 

 

Comments

Popular posts from this blog

Shoeshine [1946] : Vittorio De Sica

বুনোহাঁস : পলাশ মাহমুদ

Andaz [1949] : Mehboob Khan