পরিণীতা [১৯১৪] : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

 



পরিণীতার রচনাকালটা আমার জন‍্য বহু আকাঙ্ক্ষিত। সময় যখন ১৯১৪ তখন বাঙালি পল্টন আর মেসোপটেমিয়া মঞ্চের কথা অবধারিত ভাবে মনে ভেসে উঠে। যতদিন পর্যন্ত লেখাটা শেষ না হবে ততোদিন এমন ভাবাবেশ হতেই থাকবে মনে হচ্ছে। দীর্ঘবিরতির পর শরৎপাঠ একটু অন‍্যরকম লাগলো। প্রথম কয়েক অনুচ্ছেদে সাহিত্যিক বর্ণনাভঙ্গি প্রায় শূন্য বলা যায়। পুরো কাহিনির কাঠামো সরাসরি সংলাপে সয়লাব। তবে গল্পের পরিচয় পর্বের সহজ প্লট সরল ভাষাভঙ্গি সেই সময়ের জন‍্য অনন‍্য। রবীন্দ্রনাথের বিপরীত ধারার প্রচলন করেছিলেন, সকল পাঠকের উপযোগী। অনেকটা হুমায়ন আহমেদের ধারা বলা যায়।

 

একটা পর্বে প্লট তৈরি করে ঘটনা সূত্রকে  আড়ালে রেখে  রোমাঞ্চ রহস্য তৈরি করে রেখেছেন। পরবর্তী পর্বে সেই অপ্র্র্রকাশিত সূত্রকে প্রকাশ করে অন‍্য একটি ভিন্ন প্লটের ঘটনায় আকস্মিক অবতারণা বা গমন করা পাঠের প্রবাহকে কিছুটা শীতল তরল করে ফেলে। যেমন ললিতার তাস খেলা নিয়ে যে দ্বন্দ তৈরি হয় তা পরের পর্বে সামান‍্য একটা প‍্যারাগ্রাফে ঊল্লেখ করে ভিন্ন ঘটনায় প্লটে পর্দাপণ দেখে মনে হলো অন্যভাবে হলেও তো হতে পারতো। তবে পাঠকের অন্য অগণিত সম্ভাবনাকে লেখক বিবেচনায় রেখে লিখলে তা কখনো শেষ হবার নয়। তাই সে সরকম আশা বা দাবি অন্যায্য বলে মনে হয়।

 

ললিতা শেখরনাথের অমন আনকোরা রাগ-অনুরাগের প্রীত সম্পর্ক কিছুটা বঙ্কিমীয় কিছুটা রাবীন্দ্রীয় বলে অনুমিত হচ্ছিল। কিন্তু প্রবর্তনায় গিরীনের অনুপ্রবেশ এবং সমাপ্তিতে মালতির মতো সাথে ফয়েল চরিত্রে সাথে গিরীনের বিবাহ যা পরবর্তীতে ললিতা শেখরের শুভ পরিণয়ের অনুঘটক হিসাবে কাজ করে। পুরো প্রণয় কাঠামোটি শেষপর্যন্ত বঙ্কিম রবীন্দ্র চর্তুভূজীয় প্রণয়ছাচেঁ নামিয়ে আনে। ভাষা বণর্নাভঙ্গি ভিন্ন হলেও কাহিনী কাঠামো বিন্যাস চিরায়ত রয়ে গেলো।

 

এমন নাতিদীর্ঘ উপন্যাসে নাটকীয় বাকঁ হিসাবে পরিমাণগত ভাবে অধিক ক্লাইমেক্স তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে কর্জ পরিশোধের জন্য গিরীনের বিশাল অংকের অর্থসহায়তা, পরবর্ততীতে ললিতা-শেখরের মাল্যদান পর্ব, গুরুচরণের ব্রাহ্মধর্মান্তরিত পর্ব, শেখর-গিরীনের সত্য উন্মোচন পর্ব। কালীর পুতুলের বিয়ের মালার সমান্তরলে সাথে ললিতার মালা বিনিময় এক ভিন্ন ব্যাঞ্জনা সৃস্টি করে।

 

প্রেম ও কামের সাময়িক মোহে ললিতার সাথে শেখরের প্রণয় ও বিদ্বেষ বিষয়ে শেখরের মনোযাতনা ও নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া তা একেবারে বাস্তবিক মনে হল।

 

যদিও উপন্যাসটি পড়া শুরু করেছি বিমল রায়ের পরিনীতার চলচ্চিত্রায়নের চিত্রনাট্যর সংযোজন ও বিয়োজন -বিভাজন পরিলক্ষণ করে  পশুপতি চট্টোপাধ্যায় [হিন্দি, ভারত, ১৯৪২], অজয় কর [বাংলা, ভারত, ১৯৬৯] , আলমগীর কবির [বাংলা, বাংলাদেশ,১৯৮৬]  প্রদীপ সরকার [হিন্দি, ভারত, ২০০৫] এর চলচ্চিত্রর সাথে চিত্রনাট্যর তুলনামূলক পর্যালোচনা করা। তথাপি আমার বাংলা সাহিত্যের পাঠধারার অংশ হিসাবে অবধারিত ভাবেই ভালো লাগুক আর মন্দ লাগুক একবার পড়তেই হতো। তাছাড়া সমগ্র ভারত ও বাংলাদেশে শরৎবাবু উপন্যাসই কি সবচেয়ে বেশিবার চলচ্চিত্রায়ন করা হয়েছে। খোজঁ নিতে হবে বই কি।

 

 

পরিণীতা [১৯১৪]

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বাংলা, ভারত

 

Comments

Popular posts from this blog

Shoeshine [1946] : Vittorio De Sica

বুনোহাঁস : পলাশ মাহমুদ

Andaz [1949] : Mehboob Khan