দেবদাস [১৯৫৫] : বিমল রায়
দেবদাস উপন্যাসের শেষ সংলাপ "তারপর পার্বতী চুপ করিয়া রহিলো" যেমন করুন রসের তরঙ্গে মনকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। তেমনি বিমল রায়ের [১৯৫৫] সুচিত্রা
সেন ও সঞ্চয় লীলা বানসালির [২০০২] ঐশ্বরিয়া রাই যখন মহল থেকে এক বুক হাহাকার
নিয়ে দেবদাসের লাশ দেখতে সকল মোহ মায়া পিছনে ফেলে ছুটে যায়। এই করুন ও বেদনার রঙেমাখা
দৃশ্যখানি আমার মনে এক দীর্ঘশ্বাস সূষ্টি করে। চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠে। মুখ দিয়ে এক
আহ ধ্বনি অস্ফুট স্বরে বেজে উঠে।
সাহিত্যকে সরাসরি চিত্রায়িত না করলেও সিনেমা দুটি তার নিজস্ব শিল্পসৈান্দর্যে ভরপুর। স্বীয় শিল্পমূল্য তৈরি হয়ছে। ভাবলেই আনন্দ হয় দুটি মাধ্যমই মানুষের নিজস্ব সৃষ্টি।
শরৎচন্দ্রর গল্পের চলচ্চিত্রায়ন অপেক্ষাকৃতভাবে অধিক সহজ ও আকষর্নীয় কারণ গল্পে অধিক সৃষ্টিশীর স্পেস ফাঁকা থাকে। ঘটনাকে এমনভাবে কাঠমোবদ্ধ করা হয়। বর্ননা ও ভাষা এমন ভাবে বিন্যাস্ত থাকে। কিছু কাহিনি পড়ে অনেক না বলা গল্প মনে ভেসে উঠে যে ভাবলে মনে হয়, আরে এটাতো ব্লাঙ্ক স্পেস বা লাইনস বিটুইন বলা আছে কিন্তু বলা নাই। শুধু একটা আবছায়া একটা পাতলা ভাব থেকে যায়। আর ঠিক এই সুযোগ বা সামব্ভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে সিনেমাটিক মূল্য ও বিস্তৃতি তৈরি করতে পারেন। আর যিনি যতো বিশ্বাসযোগ্য করে আবহকে চিত্রায়িত করতে পারেন তিনি ততো দক্ষ চিত্রনির্মাতা হিসাবে গণ্য হবেন। আর ঠিক এই কারণে বিমল রায়ের পাবর্তীর সাথে চন্দ্রমুখীর পথে যেতে যেতে এক পলক দেখা কিংবা সঞ্চয় লীলা বানসালির পাবর্তীর সাথে চন্দ্রমুখীর রাগ অনুরাগ শিল্পের স্বাধীনতার জন্য দৃষ্টিকটু মনে হয়নি।
শরৎচন্দ্রর দেবদাসের শেষের পাতা আর বিমল ও সঞ্চয়ের পর্দার শেষ সিকুয়েন্স দিয়ে আমি এতোটা তাড়িত হয়েছি যে শুধুমাত্র সিনেমাটিক স্বাধীনতা বা সাহিত্যর সম্ভবতার জোরে দেবদাসের সিকুয়েল হিসাবে চন্দ্রমুখীর ও পাবর্তীর পরের জীবন নিয়ে একটি উপন্যাস বা একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করার প্রবল বাসনা জাগলো।
দেবদাস
বিমল রায় [হিন্দি, ভারত,১৯৫৫]
সঞ্চয় লীলা বানসালি [হিন্দি, ভারত, ২০০২]
Comments
Post a Comment